তওবাকারী যাদুকর পর্ব-২
পর্ব এক এর লিংক-
গতকাল কবিরাজ ভাইটিকে রুকইয়া করেছি। তেলাওয়াত শুরু করার দুই মিনিটের মধ্যেই হাত পা ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছে। আমরা দুজন কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আরো কয়েকজনকে ডেকেছি। তেলাওয়াত যতই চলছে সে ততই উগ্রতা দেখাচ্ছিল। সর্বশেষ বড় বড় দশজন মিলে তাকে কন্ট্রোল করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তারপর রাসূল সাল্লাহু আলাই সালাম এর সুন্নাহ অনুসারে তার বুকে এবং শয়তান থাকার পয়েন্টগুলোতে আঘাত করেছি। এভাবে মোটামুটি দুই থেকে আড়াই ঘন্টা রুকইয়া করেছি। শয়তানগুলো এখনো যায়নি। একবার যাওয়ার জন্য রাজি হয়েছে। কিন্তু সেটা ছিল তার ধাকা। আমরা তার কথায় পাত্তা না দিয়ে রুকইয়া চালিয়ে গিয়েছি। কারণ, যে শয়তানগুলোকে সে লাগাতার দশ বছর লালন পালন করেছে, সেগুলোর কথামতো চলেছে, এগুলো এত সহজে যাবার নয়।
শয়তান মানুষ থেকে এবাদত চায়। নিজেদেরকে রবের আসনে অধিষ্ঠিত দেখে তা থেকে কিভাবে সরতে চাবে? তার শরীরে কমপক্ষে তিনটি শক্তিশালী শয়তান রয়েছে এবং তার সহযোগী শ’খানেক রয়েছে। আর প্রত্যেকটি শয়তানই নিজেরা জাদুকর। কারণ, সে এই জীনগুলোকে চালান করত। আর চালানকৃত প্রত্যেকটি জীনই নিজেরা জাদুকর হয়ে থাকে। ভাইটি বলেছে, যদি চালান জীন সে নিজেই জাদু না জানে তাহলে জাদু কার্যকর করবে কিভাবে? বসে থাকা ছাড়া কোন কাম নাই। এজন্য জাদুকে কার্যকর করতে হলে জীনের জাদুকর হওয়া অবশ্যক। সুতরাং আমরা ধরে নিতে পারি, যাদের শরীরে জাদুর জিন রয়েছে সেই জিনগুলো নিজেরা জাদুকর।
তার বাহিনীর মধ্যে কয়েকটি রাক্ষস টাইপ জীন রয়েছে। তার শরীরে তিনটি জিনের মধ্যে একটি এমন। এ বিষয়টি আগে বিশ্বাস না করলেও শুনতাম। সেও বলেছে যে, সে সাধারণত রাক্ষস জিনগুলোকে ডাকতো না। ভয় পেত। জরুরী কাজে যখন ডাকত আগে সামনে দশ-বারোটা মুরগি রাখত। নির্দিষ্ট মন্ত্র পড়ে ডাকার সাথে সাথে এসে মুরগিগুলো মুহূর্তের মধ্যে খেয়ে ফেলত।
আল্লাহু আলম।
প্রত্যেকটা কবিরাজকেই জীন উপস্থিত করার জন্য নির্দিষ্ট মন্ত্র পড়ে ডাকতে হয়। সুবহানাল্লাহ! আমাদের বড় বড় হুজুররাও মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য শয়তানকে ডাকে! এই কথাগুলো মানতে অনেকের কষ্ট হবে। কিন্তু বাস্তবতা এর থেকেও জঘন্য। আস্তে আস্তে আপনাদের সামনে এ বিষয়গুলো স্পষ্ট করব ইনশাল্লাহ। একবার খানা দিতে দেরি হওয়ায় তার পিঠে কামড়ানো শুরু করে দিয়েছে। রুকইয়া করার সময়ও সেই জীনটি আমাদেরকে কামড়ানোর চেষ্টা করেছে। এত ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে আর কখনো পড়িনি। আল্লাহ হেফাজত করেছেন।
রুকইয়া শেষে তাকে বড়ই পাতা দিয়ে গোসল করিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। বাসায় যাওয়ার সাথে সাথে শয়তানগুলো তার কাছে এসে কথা বলা শুরু করছে। সর্বপ্রথম যখন আমার সাথে যোগাযোগ করে কবিরাজি ছেড়ে দেওয়ার জন্য, তখন থেকে তার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করছিল। তাকে তুই-তোকারি করে কথা বলতো। হুমকি-ধমকি দিতো যেন কোনোভাবেই কবিরাজি না ছাড়ে। কিন্তু কালকে মাইর খেয়ে যাওয়ার পর সুর নরম হয়ে গেছে। প্রতি মঙ্গলবার তাদেরকে ভোগ দেওয়া লাগতো। গতকালকে ভোগ দেওয়ার জন্য যে খাসিটা ছিল সেটি সদকা করে দিয়েছে। আগে কখনো ভোগ না দিলে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। কবিরাজি ছেড়ে দেওয়ার নিয়ত করে একবার ভোগ দেয় নাই। তখন সে মরণাপন্ন অবস্থায় পড়ে গিয়েছে। কিন্তু আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর। শয়তান গুলো গতকাল এসে বলছে, (তুই বাদ দিয়ে) আপনি আমাদেরকে তাড়াই দিয়েন না। আমাদেরকে কোন খানা দিতে হবে না। যদি আপনি কবিরাজি না করেন তাও কোন সমস্যা নেই। শুধু আপনার সাথে আমাদেরকে থাকতে দেন! সুবহানাল্লাহ! আমি ভাইটিকে জিজ্ঞাসা করলাম, শয়তানগুলো এত ভদ্র হইল কিভাবে? ওদেরকে বলে দিয়েন, যাওয়া ছাড়া তাদের কোনো গতি নেই। হয়তো ভাগবে নয় তো মরবে। বিইযনিল্লাহ!
আরেকটি খুশির খবর: গতরাত তিনি খুব সুন্দর করে ঘুমিয়েছেন। যা এতদিন হয়নি।
প্রিয় পাঠক! আপনাদের মনে একটি বিষয় উঁকি দিতে পারে, সেতো জিন তাড়াতো! তাহলে তার মধ্যে জিন থাকতো কিভাবে?
উত্তরটি তাহলে জেনে নিন! প্রত্যেকটা কবিরাজ যারা সাধনা করে জীন অর্জন করে তারা জাদু+জীনে আক্রান্ত। যখন সে শয়তানকে লাভ করার জন্য সাধনা করেছে এবং নির্দিষ্ট শয়তানের নাম নিয়ে ডেকেছে তখনই শয়তান তার মধ্যে প্রবেশ করেছে। এবং তাকে যাদু করেছে। আর এই শয়তানের জাদুর সাহায্যেই অন্যান্য বাহিরের শয়তানের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। তার এই জাদুটি শারীরিক ক্ষতি করার জন্য নয়। বরং ঈমানকে হরণ করার জন্য। তাকে বশ করার জন্য। তবে আল্লাহ যাকে হেফাজত করেন! পরবর্তীতে এই শয়তানের সাহায্যে সে অন্যান্য শয়তান লাভ করে। তারপর ওই শয়তানের সাহায্যে বিভিন্ন কাজ কাম করায়। আর প্রতিটি কাজই শয়তানের কথা মত করতে হয়।